সর্বনাম পদ কাকে বলে ? সর্বনাম পদের প্রকারভেদ উদাহরণ সহ আলোচনা
সর্বনাম পদ :-
একই পদের বার বার ব্যবহার যেমন আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে ,তেমনি ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করে । ভাষার মাধুর্য রক্ষার জন্য তাই একই পদের বারবার ব্যবহার কখনোই কাম্য নয় । ভাষার এই সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে অন্যপদ ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। সর্বনাম কথাটির অর্থ হল ‘সকল নাম’। তাই আমরা বলতে পারি বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। সব রকম নামের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় বলে এর নাম সর্বনাম ।
উদাহরণ :- আমি, আমরা, তুমি, আপনি,আপনাকে,আপনার, তুই , তোমরা, সে, তিনি, তার ,যে, কে, কী, ঐ,এই, ইহা,ইনি,উনি ইত্যাদি।
সর্বনামের প্রকারভেদ :
১) ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বা পুরুষবাচক সর্বনাম :
ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক শব্দের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। একে পুরুষবাচক সর্বনামও বলে। পুরুষবাচক সর্বনাম তিন ধরণের হয়- (ক) প্রথম পুরুষের সর্বনাম বা ভিন্ন পক্ষের সর্বনাম (খ) মধ্যম পুরুষের সর্বনাম বা শ্রোতা পক্ষের সর্বনাম (গ) উত্তম পুরুষের সর্বনাম বা বক্তা পক্ষের সর্বনাম ।
উদাহরণ : আমি, তুমি, আমরা, তোমরা, সে , তারা ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ – তুমি কোন কাননের ফুল ।
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ।
২) নির্দেশক সর্বনাম :
যে সর্বনাম কোনো ব্যক্তি, বস্তু ইত্যাদি নির্দেশ করে, তাদের নির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : এ,এই, ও,ওই , ইহা , উহা ,তা,তাহা,ইনি,উনি ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ :- উনি আজ আসবেন।
ইহা বর্তমান কালের ফ্যাসন হইয়াছে ।
নির্দেশক সর্বনাম দুই প্রকার- (ক) সামীপ্যবাচক নির্দেশক সর্বনাম বা নৈকট্যসূচক নির্দেশক সর্বনাম ও (খ) দূরত্ত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম ।
ক) সামীপ্যবাচক নির্দেশক সর্বনাম বা নৈকট্যসূচক নির্দেশক:-
যে সর্বনাম কাছের বা নিকটের কোনো ব্যাক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাদের সামীপ্যসূচক বা নৈকট্যসূচক নির্দেশক সর্বনাম বলে ।
যেমন: এ,এই,ইহা,ইনি,এরা ,এটা ইত্যাদি।
এঁরা আজি কলকাতায় এসেছেন। (প্রাণীবাচক)
এটা কার বই? (অপ্রাণীবাচক)
খ) দূরত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম :-
যে সর্বনাম দূরের কোনো ব্যাক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাদের দূরত্ত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম বলে । যেমন: ও,ঐ,উনি,ওরা,উহা ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ :-
উনি আগামীকাল সভায় বক্তৃতা দেবেন।
ওটা এখানে নিয়ে এসো।
৩) অনির্দেশক সর্বনাম :
যে সর্বনাম কোনো ব্যক্তি,বস্তু,বা ভাবকে নির্দিষ্ট করে বোঝায় না , তাদের অনির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : কেউ,কেহ,কেউ কেউ,কিছু,কিছু কিছু ,কোথাও ইত্যাদি ।
বাক্যে প্রয়োগ- কেউ কেউ এ কথা জানে।
কিছু কিছু ভুল হয়েছে ।
যে-কেউ আমার সঙ্গে আসতে পারে।
৪) প্রশ্নবাচক সর্বনাম :
যে সর্বনাম দ্বারা কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয় বা প্রশ্ন করা হয় ,তাকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম পদ বলে ।
উদাহরণ :- কে,কী,কি,কোন,কারা, ইত্যাদি ।
বাক্যে প্রয়োগ –
তোমাকে এখানে কে ডেকেছে ?
তুমি কী খেয়েছো ?
৫) আত্মবাচক সর্বনাম :
‘অন্য কারো সাহায্য ছাড়া’ এই ভাবটি বোঝাবার জন্য বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয় তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে । এই সর্বনাম নিজস্ব বা আত্মভাব প্রকাশ করে ।
উদাহরণ : স্বয়ং , নিজে , নিজ , খোদ , নিজে-নিজে , আপনি,আপনারে ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ –
তিনি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন ।
আমি নিজে সেকথা সকলকে জানিয়েছি।
Read More : অব্যয় পদ কাকে বলে। শ্রেণিবিভাগ সহ আলোচনা
৬) সাপেক্ষ সর্বনাম বা নিত্যসম্বন্ধী সর্বনাম :
যে সর্বনাম পদ দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর সংযোগ সাধন করে বা সঙ্গতি বিধান করে তাকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে । এই সর্বনামগুলি নিত্য সম্বন্ধযুক্ত থাকে ,অর্থাৎ একটি ব্যবহার করলে আর একটি ব্যবহার করতেই হয় । এই সর্বনামকে সঙ্গতিবাচক বা সংযোগবাচক সর্বনামও বলে । এই সর্বনামকে সমুচ্চয়ী সর্বনামও বলে ।
উদাহরণ:- যে-সে,যিনি-তিনি,যাহা-তাহা,যা-তা,যাকে-তাকে ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ –
যে সহে সে রহে ।
যাহা বাহান্ন,তাহা তিপান্ন।
৭) সমষ্টিবাচক সর্বনাম বা সাকল্যবাচক সর্বনাম :
যে সর্বনামের দ্বারা সমষ্টিবাচক ব্যক্তি,বস্তু বা ভাবকে বোঝানো হয়, তাকে সমষ্টিবাচক সর্বনাম বা সাকল্যবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : সব,সর্ব,সকল,সবাই,সবার,সবে ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ – সকলের তরে সকলে আমরা।
আমরা সবাই রাজা।
৮) ব্যতিহারিক বা পারস্পরিক সর্বনাম –
যে সর্বনামের দ্বারা পারস্পরিক সম্বন্ধ বোঝানো হয়, তাকে পারস্পরিক বা ব্যতিহারিক সর্বনাম বলে।
এই সর্বনামে ‘অন্যের প্ররোচনা বা সাহায্য ব্যতীত’ এই রকম অর্থ প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ : নিজে-নিজে , আপনা-আপনি।
বাক্যে প্রয়োগ –
নিজে নিজে কাজটি করো ।
আপনা আপনি জেগে উঠল ।
৯) অন্যাদিবাচক সর্বনাম –
যে সর্বনাম উদ্দিষ্ট ভিন্ন অন্য কোনো ব্যক্তি ,বস্তু বা ভাবকে নির্দেশ করে তাকে অন্যাদিবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : অন্য,অপর,অমুক ইত্যাদি ।
বাক্যে প্রয়োগ –
তুমি নও অন্য কেউ কাজটি করেছে ।
তিনি ছাড়া অপর কোন ব্যক্তি আজ আসেননি।
অমুক কাজটি করে দেবে ভেবে বসে থাকলে চলবে না।