সাহিত্যের রূপ ও রীতি । সাহিত্যের রূপ ও রীতি থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১. নাটক কথাটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম কোথায় কিভাবে পাওয়া যায় ?
উত্তর: নাটক কথাটি: নাটক কথাটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম ব্যবহৃত হয় চর্যাপদে- বীনা পা এর ১৭ নং পদে।
উদ্ধৃতি: “নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী।
বুদ্ধ নাটক বিষমা হোই।”
২. রূপক ও সাংকেতিক নাটকের দুটি পার্থক্য লিখুন ও একটি করে নাটকের উদাহরণ দিন ?
উত্তর: * রূপক ও সাংকেতিক নাটকের দুটি পার্থক্য :-
i) বাহ্যিক আপাত কাহিনীর অন্তরালে জীবনের গভীর কোনো ঘটনা সমস্যা বিষয়কে তুলে ধরা হয় রূপক নাটকে। আর সাংকেতিক নাটকে আদর্শভাব, কল্পনা ইত্যাদি বিমূর্ত বিষয় কেন্দ্রিক নাটক হল সাংকেতিক নাটক।
ii) রূপক নাটকে চরিত্রগুলি হয় রূপক চরিত্র ।
আর সাংকেতিক নাটকে ঘটনা বা চরিত্রগুলি ইঙ্গিতপূর্ণ বা সাংকেতিক।
একটি করে উদাহরণ: রূপক নাটক এর উদাহরণ- মন্মথ রায়ের ‘কারাগার’।
সাংকেতিক নাটকের উদাহরণ – রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’।
৩. ত্রয়ী ঐক্য কী ? ট্রাজেডির ষড়ঙ্গগুলির নাম লিখুন।
উত্তর: ত্রয়ী ঐক্যঃ – অ্যারিস্টটলের পোয়েটিকস গ্রন্থে উল্লিখিত ত্রয়ী ঐক্য হল- স্থানগত ঐক্য, কালগত ঐক্য, বিষয়গত ঐক্য।
ট্রাজেডির ষড়ঙ্গগুলি হলো: – অ্যারিস্টটল তাঁর poetics গ্রন্থে ট্রাজেডির ষড়ঙ্গ বা ছয়টি অঙ্গের কথা বলেছেন- ১. প্লট ২. চরিত্র ৩. মঞ্চসজ্জা ৪. চিন্তন ৫. বাচন ও ৬. সুর।
৪. উদাহরণ দিন : গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাট্যকাব্য , সামাজিক নাটক।
উত্তর:-
গীতিনাট্য – গিরিশচন্দ্রের ‘আবুহোসেন’ রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মিকী প্রতিভা’।
নাট্যকাব্য – রবীন্দ্রনাথের ‘বিদায় অভিশাপ’, ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ’।
নৃত্যনাট্য – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শ্যামা ‘ও ‘চন্ডালিকা’।
সামাজিক নাটক – গিরিশচন্দ্রের ‘প্রফুল্ল’ , ‘বলিদান’।
৫. প্রহসন কাকে বলে ? প্রথম বাংলা দুটি প্রহসনের নাম লিখুন।
উত্তর: প্রহসন: সামাজিক অন্যায় ,দুর্নীতি বা কপটতা বা অনাচারের বিরুদ্ধে হাস্য পরিহাস এর মধ্য দিয়ে যে সংক্ষিপ্ত নাটক লেখা হয় তাকে প্রহসন বলে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রহসন হল – একেই কি বলে সভ্যতা , বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।
৬. হ্যামারশিয়া কী ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিন।
উত্তর: হ্যামারশিয়া: ‘হ্যামারশিয়া’ কথার অর্থ চরিত্রের পতনের জন্য দায়ী নায়ক চরিত্রের বিশেষ স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য। (“Hamartia is a literary device that reflects a character’s tragic or fatal flaw, or mistake in judgment, that ultimately leads to their downfall” –Literary Devices)
উদাহরণ – “ইদিপাস” ট্রাজেডিতে রাজা ইদিপাসের Complex কেই বলা হয়েছে হ্যামারশিয়া। আর শেক্সপিয়রের ট্রাজিডিতে বলা যায় ওথেলোর সন্দেহবাতিকতা , ইর্ষা এবং ম্যাকবেথের উচ্চাকাংক্ষা ।
৭. ট্রাজেডি কাকে বলে? ট্রাজেডির জনক কে?
উত্তর:- গুরু গম্ভীর বিষয়ের যে নাটকের শেষে বিয়োগ ব্যথা বা বিষাদ জনিত কোন ঘটনা ঘটে তাকেই স্থূল অর্থে ট্রাজেডি বলে। অ্যারিস্টটল ট্রাজেডি নাটকের জনক।
Read More : অনুবাদ সাহিত্য || রামায়ন, মহাভারত, ভাগবত
৮. ট্রাজেডির উদ্ভব স্থান কোথায়? অ্যারিস্টটল কোন্ গ্রন্থে ট্রাজেডির সংজ্ঞা দিয়েছেন?
উত্তর:-ট্রাজেডির প্রথম উদ্ভব হয় গ্রিসে।
অ্যারিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিক্স’ গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে ট্রাজিডির সংজ্ঞা দিয়েছেন।
৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ট্রাজেডি নাটকের নাম লেখ।
উত্তরঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ট্রাজেডি নাটক- বিসর্জন, মালিনী।
১০.শেক্সপিয়রের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক কোনটি ?
উত্তরঃ- ‘জুলিয়াস সিজার’।
১১.’ট্রাজেডি’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ কী ?
উত্তরঃ- ’ট্রাজেডি’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘ goat-song’ বা ছাগগীতি।
১২. কিভাবে ট্রাজেডির উৎপত্তি হয়েছে ?
উত্তরঃ- প্রাচীনকালে ডায়োনিসাস দেবতার উদ্দেশ্যে ছাগল বা ভেড়া বলিদানের সময় যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, তা থেকে ট্রাজেডির উৎপত্তি হয়েছে।
১৩.ফার্স কী জাতীয় নাটক ?
উত্তরঃ- ফার্স এক ধরণের লঘু জাতীয় নাটক।
১৪. কমেডির উৎপত্তি কোথায় এবং কীভাবে ঘটে ?
উত্তর: কমেডির উৎপত্তি: কমেডি শব্দটির উৎস গ্রিক শব্দ কময়ডিয়া (komoidia)।
প্রাচীন গ্রিসে ডায়ানিওসাস দেবতার গ্রাম্য উৎসব অনুষ্ঠান থেকেই কমেডির উদ্ভব হয়েছে। কমেডির চরিত্রেরা – হাস্য পরিহাস কৌতুক উদ্রেক করে সকলের মনোরঞ্জন করে। পরে এই জাতীয় হাস্যরসাত্মক গ্রিক নাটকের নাম হয় কমেডি ; যা বিশ্ব সাহিত্যে ছড়িয়ে পড়ে।
১৫.প্রথম বাংলা কমেডি নাটক কোনটি ?
উত্তরঃ- রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীন কুল সর্বস্ব’।
১৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি কমেডি নাটকের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ- বৈকুন্ঠের খাতা ও চিরকুমার সভা।
১৭.কমেডি কাকে বলে ?
উত্তরঃ-যে নাটকে চরিত্র এবং ঘটনাসজ্জা দেখে আনন্দ পাওয়া যায় এবং নাটকের শেষে মিলন থাকে, সেই নাটকেই ‘কমেডি’নাটক বলে।
১৮. বাংলা সাহিত্যে কমেডি নাটকে কে কে সিদ্ধি লাভ করেছেন ?
উত্তরঃ- বাংলা সাহিত্যে কমেডি নাটকে মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্র সিদ্ধিলাভ করেছেন।
মধুসূদন দত্তের দুটি কমেডি নাটক হল ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’।
দীনবন্ধু মিত্রের দুটি কমেডি নাটক হল ‘সধবার একাদশী’, ‘জামাই বারিক’।
১৯. ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের দুটি প্রধান পার্থক্য লিখুন।
উত্তর: ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের প্রধান পার্থক্যগুলি হল :
– ট্রাজেডি হল ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
মহাকাব্য হল গোষ্ঠীকেন্দ্রিক।
– ট্রাজেডি হল বিয়োগান্তক।
মহাকাব্য হল মিলনান্তক।
– ট্রাজেডি হয় দৃশ্য।
মহাকাব্য হয় পাঠ্য।
২০.ক্যাথার্সিস কাকে বলে ?
ক্যাথার্সিস: ক্যাথার্সিস কথার অর্থ ভাবের বিমোক্ষণ। ট্রাজেডিতে যখন নায়ক চরিত্রের লড়াই দেখে দর্শক মনে করুণা ও ভীতির সঞ্চার ঘটে। এই করুণা ও ভীতির যখন বহিঃপ্রকাশ ঘটে তখন দর্শক মনের অবদমিত ভাব বাইরে মুক্ত হয় – একেই ক্যাথার্সিস বা ভাবের বিমোক্ষণ বলে।
২১. মেলোড্রামা কাকে বলে ? একটি উদাহরণ দিন।
উত্তর: ‘Melodrama’ শব্দটির উৎস গ্রিক ‘Melos ‘ থেকে।
বাংলায় মেলোড্রামা কে অতিনাটক বলে।
নাটকে যখন তার দ্বন্দ্ব অতিরঞ্জিত হয়, ঘটনা হয় অস্বাভাবিক,আকস্মিক কোন উত্তেজনা সৃষ্টি করাই নাটকের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় তাকেই মেলোড্রামা বলে।
উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা ও রানী’ ।
দ্বিজেন্দ্রলালের ‘সাজাহান’।
২২. কোনটি কী জাতীয় নাটক রচয়িতার নাম সহ লিখুন : এবং ইন্দ্রজিৎ, সাজাহান, গুরু, মানময়ী গার্লস স্কুল।
উত্তর:- ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ -বাদল সরকারের ‘উদ্ভট’ নাটক বা অ্যাবসার্ড ড্রামা।
‘সাজাহান’ – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ঐতিহাসিক নাটক’।
‘গুরু’ – রবীন্দ্রনাথের ‘সাংকেতিক নাটক’।
‘মানময়ী গার্লস স্কুল’- রবীন্দ্রনাথ মৈত্রের কমেডি নাটক।
২৩.গীতিকবিতা কাকে বলে ?
উত্তরঃ- গীতি কবিতা বলতে যে ধরনের কবিতা বোঝানো হয় তার সঙ্গে সঙ্গীতের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে কবির অনুভূতি ও ব্যক্তিগত উপলব্ধির সঙ্গে গীতি কবিতার এক শাশ্বত ও সর্বজনীন আবেদন থাকে। সম্ভবত এই জন্যই এই আন্তরিক অনুভূতির মধ্যে এমন এক নিত্যতা ও আবেদন থাকে যা অনুভূতিশীল সকল মানুষকে আন্দোলন করে।
২৪.গীতিকবিতা কথাটির উৎস কী ?
উত্তরঃ- গীতিকবিতা কথাটি এসেছে ইংরেজি ‘Lyric Poetry’ থেকে।
২৫. ‘Lyrical Ballads’ – কার লেখা কবিতা ?
উত্তরঃ- কোলরিজের।
২৬.কয়েকটি গীতিকাব্যের নাম লিখুন ?
উত্তরঃ- কয়েকটি গীতিকাব্যের উদাহরণ হল-
স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখা- ‘গাথা’ ও ‘বসন্ত উৎসব’।
মানকুমারী দেবীর- ‘কনকাঞ্জলি’।
অক্ষয় কুমার বড়ালের – ‘প্রদীপ’ ও ‘ভুল’
দেবেন্দ্রনাথ সেনের- ‘নির্ঝরিনী’ ও ‘গোলাপগুচ্ছ’।
বিহারীলাল চক্রবর্তীর- ‘বঙ্গসুন্দরী’, ‘নিসর্গ সন্দর্শন’, ‘বন্ধু বিয়োগ’, ‘প্রেমপ্রবাহিণী’, ‘সারদামঙ্গল’, ‘সাধের আসন’।
২৭. গীতিকাব্য সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কী বলেছেন ?
উত্তরঃ- গীতিকাব্য সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন- “গীতের যে উদ্দেশ্য, যে কাব্যের সেই উদ্দেশ্য, তাহাই গীতিকাব্য। বক্তার ভাবোচ্ছাসের পরিস্ফুটতামাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।”