কথাসাহিত্যে লীলা মজুমদাররের অবদান । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ও WBSLST Bangla 2023 Exam Preparation
কথাসাহিত্যে লীলা মজুমদাররের অবদান
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস । কথাসাহিত্য । আধুনিক যুগ
লীলা মজুমদার ( ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ – ৫ই এপ্রিল ২০০৭)
লীলা মজুমদারের জন্ম ও বংশ পরিচয় :
জন্ম:- বিশ্বখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যা ছিলেন লেখিকা। ১৯০৮ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই স্বনামধন্য লেখিকার জন্ম।
পিতা:- প্রমদারঞ্জন রায় ।
মাতা:- সুরমাদেবী ।
পারিবারিক উপাধি:- ‘রায়'( চিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদারের সঙ্গে বিবাহের পর ‘মজুমদার’ পদবী যোগ করেন।
প্রখ্যাত লেখক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন লীলার জ্যাঠামশাই সেই সূত্রে তিনি ছিলেন শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন, ও সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল পিসি-ভাইপোর ৷
মৃত্য:- ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ই এপ্রিল কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার জীবনাবসান ঘটে, মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৯ বছর।
পুরষ্কার ও সম্মাননা :-
★ আনন্দ পুরস্কার।
★ ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক।
★ ভারত সরকারের শিশুসাহিত্য পুরস্কার।
★ দেশিকোত্তম।
★ রবীন্দ্র পুরস্কার( ‘আর কোনোখানে’ স্মৃতিচারণ গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেন।
★ সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ( ১৯৫৯) (‘বক বধ পালা’ নাটকের জন্য)।
★ ভুবনেশ্বরী পদক। ইত্যাদি।
সাহিত্য কর্ম:-
লীলা মজুমদার রচনা সমগ্র –
আত্মপ্রকাশ:- বড়দা সুকুমার রায়ের নির্দেশে মাত্র ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ‘লক্ষ্মীছাড়া’ নামে একটি গল্প লেখেন। এই গল্প প্রকাশের মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে বড়দা সুকুমার রায় এই গল্পটির নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন ‘লক্ষ্মীছেলে’।
প্রথম গল্প:- তাঁর প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ১৯২২ সালে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রথম উপন্যাস :- প্রথম লেখা উপন্যাস’ ‘হলদে পাখির পালক’ (১৯৫৭)। আগে লিখলেও সেটি পরে প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা একটি উপন্যাস।
প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হল- ‘পদিপিসির বর্মি বাক্স’ (১৯৫৩) । এটিও ছোটদের জন্য লেখা একটি উপন্যাস।
প্রথম গল্পগ্রন্থ:- ‘বদ্যিনাথের বাড়ি’ – ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়।
আত্মজীবনী মূলক গ্ৰন্থ:- ‘পাকদণ্ডী’ (১৯৮৬)।
লীলা মজুমদার রচিত উপন্যাসগুলির নাম ও প্রকাশকাল :-
১.’পদিপিসির বর্মি বাক্স’ (১৯৫৩)
২.’হলদে পাখির পালক’ (১৯৫৭)
৩.’জোনাকী’ (১৯৫৮)
৪. ‘শ্রীমতি’ (১৯৫৮)
৫. ‘ঝাঁপতাল’ (১৯৫৮)
৬.’গুপীর গুপ্তখাতা (১৯৫৯)
৭.’বকধার্মিক’ (১৯৬০)
৮. ‘চীনে লন্ঠন'(১৯৬৩)
৯.’টং লিং’ (১৯৬৩)
১০.’মাকু’ (১৯৬৮)
১১.’নেপোর বই’ (১৯৬৯)
১২.’ফেরারী’ (১৯৭১)
১৩.’নাকু গামা ‘(১৯৭৩)
১৪.’বাতাসবাড়ি’ (১৯৭৪)
১৫.’দুলিয়া’ (১৯৭৭)
১৬. ‘হাওয়ার দাঁড়ি’ (১৯৮৩)
১৭. ‘চকমকি মণি’ (১৯৯০)
১৮. ‘মণিকাঞ্চন’ (১৯৯৩)
গল্পগ্রন্থ :
১.‘বদ্যিনাথের বাড়ি'(১৯৪০)
২.‘দিন দুপুরে'(১৯৪৮)
৩.‘মনিমালা'(১৯৫৬)
৪.’লাল নীল দেশলাই’ (১৯৫৯)
৫.‘বাঘের চোখ’ (১৯৫৯)
৬.’ইষ্টকুটুম’ (১৯৫৯)
৭.’টাকা গাছ’ (১৯৬১)
৮.’হাস্য ও রহস্যের গল্প’ (১৯৭১)
৯.’বড়পানি’ (১৯৭২),
১০.’হাসির গল্প’ (১৯৭৪)
১১.‘গুণু পন্ডিতের গুণপনা'(১৯৭৫)
১২.’হট্টমেলার দেশে’ (১৯৭৭)
১৩.‘কাগ নয়'(১৯৮১)
১৪.’সব ভুতুরে’ (১৯৮৩)
১৫.‘গুপী পানুর কীর্তিকলাপ'(১৯৮৩)
১৬.’বেড়ালের বই'(১৯৯২)
১৮.‘চিচিং ফাঁক'(১৯৯৪)
১৯.‘মণিমানিক'(২০০০)
২০.’বাঘিয়ার গল্প’ (২০০০)
২১.’মিঠুর ডায়েরি'(২০০০),
২২.’আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ (২০০০)
২৩.’কল্পবিজ্ঞানের গল্প’ (২০০০)
Read More : কথাসাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর অবদান
প্রবন্ধ-নিবন্ধ :-
১) ‘হাতি হাতি’ (১৯৫৭)
২) ‘রান্নার বই’ (১৯৭৯)
৩) ‘ভুতোর ডাইরি’ (১৯৭৯)
৪) ‘জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি’ (১৯৮৬)
৫) ‘ঘরকন্নার বই’ (১৯৮৮)
৬) ‘আমি নারী’ (১৯৮৯)
৭) ‘আমিও তাই’ (১৯৮৯)
৮) ‘সংসারের খুঁটিনাটি ও শিশুদের নামকরণ’ (১৯৯০)
৯) ‘যে যাই বলুক’ (১৯৯২)
১০) ‘হালকা খাবার’ ( ১৯৯৩)
নাটক :-
১) ‘বক বধ পালা’ (১৯৫৯)
২) ‘গাওনা’ (১৯৬০)
৩) ‘মোহিনী’ (১৯৬৩)
৪) ‘লঙ্কা দহন পালা’ (১৯৬৪)
৫)’ ওয়েটিং রুম'(১৯৬৬)
৬) ‘লীলা মজুমদারের ছোটোদের নাটক সমগ্র’
জীবনী মূলক গ্ৰন্থ:-
১) ‘এই যা দেখা’ (১৯৬১)
২) ‘কবি কথা’ (১৯৬১)
৩) ‘উপেন্দ্রকিশোর’ (১৯৬৩)
৪) ‘অবনীন্দ্রনাথ’ (১৯৬৬)
৫) ‘সুকুমার’ (১৯৮৯)
৬) ‘মহামানব চরিত’
স্মৃতিচারণামূলক গ্ৰন্থ:-
১) ‘আর কোনোখানে’ (১৯৬৭)
২) ‘খেরোর খাতা’ (১৯৮২)
আত্মজীবনী মূলক গ্ৰন্থ:-
‘পাকদণ্ডী’ (১৯৮৬)
রচনা সংগ্রহ:-
১) ‘ছোটোদের অমনিবাস’ (১৯৬৫)
২) ‘লীলা মজুমদারের রচনাবলী’ (৬ খণ্ড, ১৯৭৬-১৯৮৬)
৩) ‘লীলা অমনিবাস’ (১ম খনৃড১৯৮৫, ২য়
খন্ড১৯৮৫)
৪) ‘চিরকালের সেরা’ (১৯৯৭)
৫) ‘রায় পরিবারের চার পুরুষের লেখা’
৬) ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ (২০০৪)
অনুবাদ গ্রন্থ:-
১) ‘নদীকথা'(১৯৬৮-৭০) [মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে যুগ্মভাবে]
২) ‘ভারতে বিদেশী যাত্রা’ (১৯৭১)
৩) ‘চার বিচারকের দরবার’ (১৯৭৪)
৪) ‘বাঘদাঁত’ (১৯৭৫)
৫) ‘হ্যাল অ্যাণ্ডারসন রচনাবলী’ (১৯৭৬)
৬) ‘গালিভারের ভ্রমণ বৃত্তান্ত’ (১৯৮৩)
৭) ‘সরস গল্প’
যৌথ রচনা:-
১.’ টাকা গাছ'(১৯৬১) – জয়ন্ত চৌধুরী সঙ্গে যুগ্মভাবে
২. ‘হট্টমেলার দেশে'(১৯৭৭) – প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে।
৩. ‘ হিরে মতি পান্না'(১৯৭৮) – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে লীলা মজুমদার একত্রে রচনা করেন
৪.’ নদীকথা'(১৯৬৮-৭০)- মহেশ্বেতা দেবীর সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়িত বই:-
‘পদিপীসির বর্মী বাক্স’ (১৯৫৩) উপন্যাস। ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স ‘খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেত্রী ও পরিচালক অরুন্ধতী দেবী পরিচালিত বাংলা অ্যাডভেঞ্চার কমেডি চলচ্চিত্র। লীলা মজুমদারের একই নামের ছোটদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি।
লীলা মজুমদারের উপন্যাস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:-
১. পদিপিসির বর্মি বাক্স (১৯৫৩)
‘রংমশাল’ পত্রিকায় ১৩৫১ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৫২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
ছোটোদের জন্য লেখা।
২. হলদে পাখির পালক (১৯৫৭)
গ্রন্থটির নামকরণ করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করা হয়েছে এই গ্রন্থটি।
ছোটোদের জন্য লেখা উপন্যাস।
৩. গুপীর গুপ্তখাতা (১৯৫৯)
‘রংমশাল’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
পত্রিকায় প্রকাশকালে রচনাটির নাম ছিল ‘ভয় যাদের পিছু নিয়েছে।
গ্রন্থের চিত্রগুলি রঞ্জন মজুমদারের আঁকা।
৪. বকধার্মিক (১৯৬০)
১৫টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত সমগ্র কাহিনি।
প্রধান চরিত্র – লাবণ্য, নেপু
গ্রন্থটি জয়ন্ত চৌধুরীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
এই উপন্যাস অবলম্বনে ‘হীরের প্রজাপতি’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যার পরিচালক হলেন শান্তিপ্রসাদ চৌধুরী।
৫. টং লিং (১৯৬৩)
ছোটোদের জন্য লেখা উপন্যাস।
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
মোট ১২টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত।
উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হল বলরাম, কালো মাষ্টার প্রমুখ।
উৎসর্গ করা হয়েছে ‘মোনা ও পিয়া’কে।
৬. মাকু (১৯৬৮)
ছোটোদের জন্য রচিত উপন্যাস।
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থের চিত্রগুলি সত্যজিৎ রায়ের আঁকা।
৮. নেপোর বই (১৯৬৯)
ছোটোদের জন্য রচিত।
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে রচনাটি ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
মোট ১১টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত।
উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হল বলরাম, গুপী।
গ্রন্থের অনেক চিত্র এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
আশা করি কথাসাহিত্যে লীলা মজুমদাররের অবদান নিয়ে আমাদের লেখাটি তোমাদের কাজে লাগবে। এই ধরণের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে এবং আমাদের সমস্ত ক্লাসগুলি ভিডিও আকারে পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলের সাথে অবশ্যই যুক্ত থাকো। আর কোন ধরনণের লেখা পেতে চাও তা আমাদের কমেন্টে অবশ্যই জানাও।