SSCবাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

অনুবাদ সাহিত্য || রামায়ন, মহাভারত, ভাগবত

অনুবাদ সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে যে বেশকিছু সাহিত্য রচিত হয়েছিল তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলা যেতে পারে অনুবাদ সাহিত্য।
অনুবাদগ্রন্থ সমূহ মুলত সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ভাষা থেকে অনুদিত হয়।

  • অনুবাদ সাহিত্য সৃষ্টির কারণ —
    ক) তুর্কি আক্রমণের পরবর্তী বিপন্নতা।
    খ) সংস্কৃত সাহিত্যে রসাস্বাদনের প্রতি আগ্রহ।
    গ) হিন্দু সংস্কৃতির পুনরুত্থানের চেষ্টা।
    ঘ) রাজকীয় পৃষ্টপোষনা।
    ঙ) সক্ষম ও আগ্রহী কবির আবির্ভাব।
  • অনুবাদ সাহিত্যের প্রধান ধারার তিনটি। যথা —
    রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত।

রামায়ণ অনুবাদ ধারা 👇

  • রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা। গ্রন্থের নাম ‘শ্রীরাম পাঁচালী’।
    মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস। গ্রন্থের নাম ‘ভারত পাঁচালী’।
    ভাগবতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক মালাধর বসু। গ্রন্থের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’। রামায়নঃ
  • সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
  • ‘রামচরিত’ থেকে রচিত।
  • ৭ খন্ডে রচিত।
  • শ্লোকঃ ২৮ হাজার।
  • রামায়ণ রচনা করেনঃ বাল্মীকি গঙ্গা নদীর তীরে বসে।
  • বাল্মীকির মূল নামঃ দস্যু রত্নাকর।
  • বাল্মীকি শব্দের অর্থঃ উইপোকা ।
  • প্রধান চরিত্রঃ রাম, লক্ষন, সীতা, রাবণ।

কৃত্তিবাস ওঝা

  • প্রথম ও শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদকঃ কৃত্তিবাস ওঝা। তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি।
  • কৃত্তিবাস ওঝার অনুবাদের নামঃ শ্রীরাম পাঁচালী।
  • কৃত্তিবাসি রামায়ণের রচনাকাল ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দ।
    মতান্তরে ১৪৬৫ – ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ।
  • রামায়ণের আদি অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা।
  • তাঁর আবির্ভাবকাল সম্পর্কে প্রাপ্ত ভনিতাটি হল —
    “আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পূর্ণ মাঘ মাস।
    তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।।”
  • তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত ফুলিয়া গ্রামে বাস করতেন।
  • পৃষ্ঠপোষক রাজা – কবি কৃত্তিবাস এই প্রসঙ্গেও তাঁর গ্রন্থে পৃষ্ঠপোষক রাজার নাম উল্লেখ করেননি। ফলে পৃষ্ঠপোষক রাজা সম্পর্কেও সমালোচকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন।

১। সুখময় মুখোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ
পণ্ডিতেরা পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসেবে গৌড়েশ্বর রুকনুদ্দিন বরবক শাহ -এর নামোল্লেখ করেছেন। রুকনুদ্দিন বরবাক শাহ ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন।
২। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখরা রাজা গণেশের নাম উল্লেখ করেছেন পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসেবে।
৩। পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসেবে কংসনারায়ণ -এর নাম উল্লেখ করেছেন ডঃ সুকুমার সেন।

  • কৃত্তিবাস ওঝা রামায়ণ অনুবাদ করেন পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে।
  • ১৮০২-১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন থেকে উইলিয়াম কেরির উদ্যোগে ‘শ্রীরাম পাঁচালী’ পাঁচটি খন্ডে প্রথম মুদ্রিত হয়। ১৮৩০-১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনায় দ্বিতীয় ও পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
  • কৃত্তিবাসী রামায়ণের মোট কান্ড সংখ্যা সাতটি। আদি কান্ড, অযোধ্যা কান্ড, অরণ্য কান্ড, কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড
    সুন্দর কাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড এবং উত্তরকান্ড।
  • কৃত্তিবাসের রামায়ণের কাহিনি চয়ন করা হয়েছে —
    জৈমিনী ভারত , বাল্মিকী রামায়ণ , অদ্ভুত রামায়ণ , পদ্মপুরাণ , স্কন্দ পুরাণ , মার্কেণ্ডীয় পুরাণ।
  • কৃত্তিবাস ওঝার পিতার নাম বনমালী ও মাতার নাম মালিনী।
  • কৃত্তিবাস ওঝার পারিবারিক উপাধি ছিল মুখোপাধ্যায় (মুখুটি)
  • কৃত্তিবাসের রামায়ণের সবচেয়ে জনপ্রিয় হাস্যরস হলো ‘অঙ্গদের রায়বার’।
  • কৃত্তিবাসের জন্মবার ছিল আদিত্যবার অর্থাৎ রবিবার।
  • প্রথম মহিলা অনুবাদকঃ চন্দ্রাবতী (বাংলা সাহিত্যের
    প্রথম মহিলা কবি)।
  • চন্দ্রাবতীর বাড়িঃ কিশোরগঞ্জ।
  • চন্দ্রাবতীর পিতার নামঃ দ্বিজ বংশীদাস।
  • চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার নারী সমাজে বেশি প্রচলিত ছিল।

অদ্ভুত আচার্যঃ-

অদ্ভুত আচার্য চৈতন্য পরবর্তী রামায়ণ অনুবাদক । অনেকের মতে ষোড়শ শতকে তাঁর জন্ম । ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে তিনি আনুমানিক ১৫৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাবনার উত্তর-পূর্বে সোনাবাজু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম শ্রীনিবাস আচার্য এবং মাতার নাম মেনকা দেবী । তাঁর প্রকৃত নাম নিত্যানন্দ আচার্য। ১৩২০ সালে ‘রংপুর সাহিত্য পরিষদ’ থেকে রজনীকান্ত চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ‘অদ্ভুত আচার্যের রামায়ণ’ প্রকাশিত হয় ।

  • অদ্ভুত রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ করেছিলেন কৈলাস চন্দ্র বসু।
  • সপ্তদশ শতকের কয়েকজন রামায়ণ অনুবাদকের নাম হল কৈলাস বসু ,ভবানী দাস, ঘনশ্যাম দাস।
  • অষ্টাদশ শতকের কয়েকজন রামায়ণ অনুবাদকের নাম হলো শঙ্কর কবিচন্দ্র, রামানন্দ ঘোষ ,রামচন্দ্র জ্যোতি।
  • ‘শ্রীরামমঙ্গল’ শংকর কবিচন্দ্রের লেখা।

মহাভারত অনুবাদ ধারা 👇🏿

  • সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
  • ১৮ খন্ডে রচিত।
  • প্রধান চরিত্রঃ অভিমন্যু, অর্জুন, কর্ণ, গান্ধারী, দ্রোপদী।
  • রচয়িতাঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
  • মহাভারতের আদি অনুবাদক শ্রীকর নন্দী। শ্রীকর নন্দী পূর্ণাঙ্গ মহাভারত অনুবাদ না করে সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত অবলম্বনে জৈমিনি রচিত জৈমিনি ভারত থেকে শুধু “অশ্বমেধ পর্ব” অনুবাদ করেছিলেন।
  • প্রথম বাংলা অনুবাদকঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর,পরাগল খাঁ-এর নির্দেশে অনুবাদ করেন এবং এর নাম দেন ‘পরাগলী মহাভারত’।
  • শ্রীকর নন্দী, পরাগল খাঁ-এর পুত্র ছুটি খাঁ -এর নির্দেশে মহাভারত বাংলানুবাদ করেন এবং এর নাম দেন ‘ছুটিখানি মহাভারত’।

কাশীরাম দাস

  • শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদকঃ কাশীরাম দাস। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ চৈতন্য পরবর্তী যুগে কাশীরাম দাস ‘ভারত পাঁচালী’ রচনা করেন।
  • কাশীরাম দাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার সিঙ্গি গ্রামে।
  • কাশীরাম দাসের পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত।
  • কাশীরাম দাসের কুল পদবি হল দেব।
  • কাশীরাম দাস রচিত কাব্যটির নাম হল ‘ভারত পাঁচালী’।
  • কাশীরাম দাস অভিরাম মুখোটির নির্দেশে মহাভারত অনুবাদ করেছিলেন।
  • কাশীরাম দাস ব্যাসদেবের মূল মহাভারত এবং জৈমিনি- মহাভারত অনুসরণে ‘ভারত পাঁচালী’ নামে মহাভারতের অনুবাদ গ্রন্থ সৃষ্টি করেছিলেন।
  • কাশীরাম দাস মহাভারতের আদিপর্ব , সভাপর্ব , বন পর্ব ও বিরাট পর্বের কিছুটা অংশ অনুবাদ করেন ।
    এ সম্পর্কে ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দরামের উদ্ধৃতিটি হল —
    “আদি সভা বন বিরাটের কতদূর ।
    ইহা রচি কাশীদাস গেলা স্বর্গপুর ।।“

কাশীরাম ছাড়া অন্য চারজন মহাভারতের অনুবাদকের নাম ও তাঁদের কাব্যের নাম –

ভাগবত অনুবাদ ধারা 👇🏿

  • সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
  • ১২ খন্ডে রচিত।
  • রচয়িতাঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
  • প্রথম বাংলা অনুবাদকঃ মালাধর বসু। মালাধর বসু সম্ভবত ১৪২০ থেকে ১৪২২ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলার কুলীন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
  • মালাধর বসুর পিতার নাম ভগীরথ ও মাতার নাম
    ইন্দুমতী।
  • মালাধর বসুর উপাধিঃ গুনরাজ । এ উপাধি দেন
    রুকনউদ্দিন বরবক শাহ্।
  • মালাধর বসুর রচিত অনুবাদক কাব্যটির নাম ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’।
  • বাংলা সাহিত্যে প্রথম সরাসরি রচনাকাল জ্ঞাপক ভণিতা হল — “তেরশ পঁচানই শকে গ্রন্থ আরম্ভন ।
    চতুর্দশ দুই শকে হৈল সমাপন ।।”
    এই রচনাকাল জ্ঞাপক ভনিতাটির রচয়িতা মালাধর বসু । অর্থাৎ মালাধর বসু ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্য রচনা শুরু করেন এবং সমাপ্ত করেন ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে।
  • ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটির অপর নাম ‘গোবিন্দবিজয়’ ও ‘গোবিন্দমঙ্গল’।
  • মালাধর বসু ভাগবত পুরাণের দশম ও একাদশ স্কন্ধের কাহিনী অবলম্বনে তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটি রচনা করেছিলেন।
  • ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যে মোট তিনটি খন্ড রয়েছে।
  • শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের তিনটি খন্ড হল- আদি খন্ড বা বৃন্দাবনলীলা, মধ্যখন্ড বা মথুরালীলা, অন্তখন্ড বা দ্বারকালীলা।
  • শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের মোট অধ্যায় সংখ্যা ৩৩৫ টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Primary TET 2022 Mock Test

X