SSCবাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী সর্বপ্রথম গীতিকবিতার প্রতি সর্বাত্মকভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং মহাকাব্যের যুগে তিনি নিজের মনে কাব্যালোকের সুর সাধনা করেছেন। পরবর্তীকালে যখন মহাকাব্যের জলোচ্ছ্বাস মন্দীভূত হয়ে এল, তখন গীতিকবিতা প্রাধান্য পেল। বাংলা কাব্যের পালাবদলের ইতিহাসে প্রধান সূত্রকার কবি বিহারীলাল। পরবর্তীকালে তার শিষ্য সম্প্রদায় গীতিকবিতায় অবতীর্ণ হয়ে যেন তাঁর সুরেই সুর মিলিয়েছেন। বিহারীলাল চক্রবর্তী বাংলায় রোমান্টিক গীতিকাব্যের প্রথম ও সার্থক পথপ্রদর্শক। তিনি প্রথম আত্ম-ভাবমূলক গীতিকবিতা রচনা করেন। তাই রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালকে “ভোরের পাখি” রূপে অভিহিত করেন –

সে প্রত্যুষে অধিক লোক জাগে নাই এবং সাহিত্যকুঞ্জে বিচিত্র কলগীত কূজিত হইয়া উঠে নাই। সেই উষালোকে কেবল একটি ভোরের পাখি সুমিষ্ট সুন্দর সুরে গান ধরিয়াছিল। সে সুর তাহার নিজের।’’ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিহারীলালের কাব্যসমূহ :

১৷ স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮)
২৷ সঙ্গীত শতক(১৮৬২)
৩৷ নিসর্গসন্দর্শন (১৮৭০)
৪৷ বঙ্গসুন্দরী(১৮৭০)
৫৷ বন্ধু বিয়োগ(১৮৭০)
৬৷ প্রেম প্রবাহিনী(১৮৭০)
৭৷ সারদামঙ্গল(১৮৭৯)
৮৷ সাধের আসন(১৮৮৯)
৯৷ মায়াদেবী(১৮৮২)
১০৷ ধূমকেতু(১৮৮২)
১১৷ নিসর্গ সঙ্গীত (১৮৮২)
১২৷ বাউল বিংশতি (১৮৮৭)
১৩৷ গোধূলী (১৮৯৯)

বিহারীলালের কাব্য ও সেগুলি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

1 “সঙ্গীত শতক” (১৮৬২) –

প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
গ্রন্থ টি ১০০ টি সঙ্গীতের সমন্বয়।
এই কাব্যগ্রন্থ টি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বিহারীলাল চক্রবর্তী ঠাকুর পরিবারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই কাব্যগ্রন্থের সমাপ্তি সূচক কবিতা টি কবিপত্নীর উদ্দেশ্যে রচিত।

2) “বঙ্গসুন্দরী” (১৮৭০) –

কাব্যটি ১০ টি সর্গে বিভক্ত।
প্রথম সংস্করণে ছিল ৯ টি সর্গ। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় সংস্করণে আরও একটি সর্গ ‘সুরবালা’ সংযোজিত হয়।
১০টি সর্গ হল যথাক্রমে – ‘উপহার’, ‘নারীবন্দনা’, ‘সুরবালা’, ‘চিরপরাধিনী’, ‘করুণা সুন্দরী’, ‘বিষাদিনী’,‘প্রিয়সখী’, ‘বিরহিণী’, ‘প্রিয়তমা’ এবং ‘অভাগিনী’।
প্রতিটি সর্গের প্রারম্ভে একটি করে উদ্ধৃতি রয়েছে। উদ্ধৃতিগুলি কালিদাস, ভবভূতি, ভারবি এবং বায়রণের।

3) “নিসর্গসন্দর্শন” (১৮৭০) –

এই কাব্যগ্রন্থ টি প্রথম ‘অবোধবন্ধু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
কাব্যগ্রন্থটি মোট ৭ টি সর্গে বিভক্ত। সর্গগুলি হল ‘চিন্তা’, ‘সমুদ্ৰ দৰ্শন’, ‘বীরাঙ্গণা’, ‘নভোমণ্ডল’,‘ঝটিকার রজনী’, ‘ঝটিকা সম্ভোগ’ এবং ‘প্রভাত’।
কাব্যের দ্বিতীয় সর্গ ‘সমুদ্র দর্শন’ পুরীর সমুদ্র দর্শনের পর লেখা।

4) “বন্ধুবিয়োগ” (১৮৭০) –

কাব্যগ্রন্থ টি প্রথম ‘পূর্ণিমা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৪টি সর্গে রচিত শোককাব্য। সর্গগুলি হল – ‘পূর্ণ –বিজয়’, ‘কৈলাস’, ‘সরলা’ এবং ‘রামচন্দ্ৰ’।
কাব্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী তাঁর ৪ বন্ধু – পূর্ণচন্দ্ৰ , কৈলাস, বিজয় ও রামচন্দ্র এবং তাঁর প্রথমা পত্নী অভয়া দেবী (সরলা দেবী) -র বিয়োগ ব্যথা ব্যক্ত করেছেন।
প্রথম সর্গ ‘পূর্ণ – বিজয়’ –এ কবি বন্ধু পূর্ণচন্দ্র এবং বিজয় সম্পর্কে তাঁর বেদনা নিবেদন করেছেন। দ্বিতীয় সর্গ ‘কৈলাস’ রচনা করেন বন্ধু কৈলাসের উদ্দেশ্যে।

5) “প্রেমপ্রবাহিনী” (১৮৭০) –

কাব্যগ্রন্থ টি প্রথম ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে ‘অবোধবন্ধু পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়।
৫টি সর্গে কাব্যটি রচিত।
সর্গগুলি হল – ‘পতন’, ‘বিরাগ’, ‘বিষাদ’, ‘অন্বেষণ’ এবং ‘নির্বাণ’।
এই কাব্যগ্রন্থের তৃতীয় এবং পঞ্চম সর্গের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার মজুমদার Wordsworth আর Shelley -র প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।

6) “সারদামঙ্গল” (১৮৭৯) –

বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য।
কাব্যগ্রন্থটি ‘আর্যদর্শন’ পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়।
‘ঊষা’ বন্দনা দিয়ে কাব্যের শুরু –
“চরণ কমলে লেখা
আধ আধ রবি রেখা
সর্বাঙ্গে গোলাপ আভা, সীমান্তে শুকতারা
জ্বলে”।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- “সারদামঙ্গল এক অপরূপ কাব্য”।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বাল্মীকি প্রতিভা”তে বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

7) “সাধের আসন” (১৮৮৯) –

কাব্যের প্রেক্ষাপটে আছে কবির মানসলক্ষী সম্পর্কে কাদম্বরী দেবীর অনুসন্ধিৎসা এবং কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু ।
কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন কাদম্বরী দেবী-কে।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম ৩ টি সর্গ ‘মালঞ্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এই কাব্যগ্রন্থে কবি তাঁর কল্পিত নারী মূর্তি সারদার স্বরূপ স্পষ্টভাবে চিত্রিত করেছেন।

8) ‘বাউলবিংশতি’ (১৮৮৭) –

এই গ্রন্থটি কবির ২০টি বাউল গানের সংকলন ।

বিহারীলালের কাব্যব্যভাবনা ও কবি বৈশিষ্ট্য:-

বিহারীলাল রোমান্টিক কবি। তাঁর কাব্যে রোমান্টিকতার সঙ্গে মিস্টিসিজম এর সম্পর্ক নিকট ও নিবিড়।

বাংলা সাহিত্য যখন মহাকাব্যের গাম্ভীর্যে মহামান্বিত এবং আখ্যানকাব্য ধারায় উজ্জ্বল তখন বিহারীলালের কাব্যে গীতি কবিতার সুর ঝংকার হয়।

বিহারীলাল সুন্দরীর উপাসক। বিশ্বের তাবৎ পদার্থের অন্তরালে এক পরম-সুন্দরকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন।
তার কাব্যে ক্লাসিক রীতির অনেকটাই ছিন্ন হয়েছে, যদিও সে প্রভাব তিনি সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

বিহারীলাল গীতি শাখার এক অভিনব যুগ সৃষ্টি করলেও বিহারীলাল সে যুগে গীতিকাব্যের যুগন্ধর পুরুষ হতে পারেননি। তার মধ্যে‌ গীতিকাব্যের নব সম্ভাবনা মুকুলিত হলেও পরবর্তীকালে তার শিষ্যদের মধ্যে তা প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে এ কথা অনস্বীকার্য।

Read More : কাব্য সাহিত্যে মধুসূদন দত্তর অবদান

Important SAQ question :

1) বিহারীলাল চক্রবর্তীর বংশগত উপাধি কী ?

উঃ চট্টোপাধ্যায় ।

2)’সারদামঙ্গল’ কাব্যটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?

উঃ আর্যদর্শন।

3) বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য কোনটি ?

উঃ সারদামঙ্গল।

4) ‘সাধের আসন’ তিনি কাকে উৎসর্গ করেন ?

উঃ কাদম্বরী দেবীকে।

5) ‘বন্ধুবিয়োগ’ কাব্যটির মূল বিষয়বস্তু কী ?

উঃ ‘বন্ধুবিয়োগ’ কাব্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী তাঁর চার বন্ধু – পূর্ণচন্দ্ৰ, কৈলাস, বিজয় ও রামচন্দ্র এবং তাঁর প্রথমা পত্নী অভয়া দেবী (সরলা দেবী) -র বিয়োগ ব্যথা ব্যক্ত করেছেন।

6) বিহারীলালকে কে ‘ভোরের পাখি’ নামে আখ্যায়িত করেছেন ?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

7) ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যটি ক’টি সর্গে বিভক্ত ?

উঃ ১০টি।

8) কোন কাব্যগ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি ঠাকুর পরিবারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ?

উঃ ‘সঙ্গীতশতক’।

9) ‘বাউলবিংশতি’ কার লেখা ?

উঃ বিহারীলাল চক্রবর্তীর লেখা।

10) ‘সাধের আসন’ কাব্যটি কবে প্রকাশিত হয় ?

উঃ ১৮৮৮ খ্রি।

11)ত্রিবিধ বিরহ কী ?

উত্তর:- মৈত্রী বিরহ , প্রীতি বিরহ , সরস্বতী বিরহ ইত্যাদি । এগুলিকে ত্রিবিধ বলে ।

12)সারদামঙ্গল কাব্য কয়টি গীতি আছে ?

উত্তর:- সারদামঙ্গল কাব্য মোট সাতটি গীতি আছে।

কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান লেখাটি তোমাদের কতটা কাজে লাগলো তা আমাদের কমেন্টে অবশ্যই জানাও। এই ধরনের আর কোন কোন লেখা পেতে চাও তা আমাদের অবশ্যই জানাও। সমস্ত ক্লাসের নিয়মিত ভিডিও পেতে Prerona Academy YouTube চ্যানেলটিতে অবশ্যই যুক্ত থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Primary TET 2022 Mock Test

X