SSCবাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ( ১৮২০-১৮৯১)

বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর (১২২৭ সনের ১২ আশ্বিন) পশ্চিম মেদনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে রক্ষণশীল এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতা- ভগবতী দেবী। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক অক্ষয়কুমার অসুস্থ হলে বিদ্যাসাগর সম্পাদক হন এবং ১৮৪৭ – ১৮৬৫ পর্যন্ত এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্মৃতিশাস্ত্রে অভাবনীয় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন।

বিদ্যাসাগর ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। সেখানে পাঁচ বছর তিনি কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। ১৮৫৬ সালে ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন বিধিবদ্ধ করেন। ১৮৬৪ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য পদে নির্বাচিত হন। ১৮৮০ সালে ভারত সরকার সি. আই. ই উপাধিতে ভূষিত করেন।

বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেন। প্রয়োজনবোধে সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতাও যুক্ত করেন। কল্পনা ও স্বকীয় পাণ্ডিত্যের সংমিশ্রণে যে গদ্যভাষার জন্ম তিনি দেন, তা ছিল সরস, সুমধুর, সুশ্রাব্য, ছন্দোময় ও গতিশীল। এই অর্থে তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা। তিনি বাংলা আধুনিক গদ্যের জনক।
মান্য সাধু বাংলা গদ্যের শিল্পরূপটি ঠিক কীরকম হতে পারে, তার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল, সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অনূদিত বিদ্যাসাগরের বাংলা রচনাগুলিতে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচনাবলী:-

১.অনুবাদমমূলক রচনা:-

ক) ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ – ১৮৪৭ খ্রিঃ ( হিন্দী গ্রন্থ ‘বৈতাল পচ্চীসী’থেকে অনুবাদ)
খ) ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ – ১৮৪৮ খ্রিঃ (মার্শম্যানের ‘History of Bengal’ এর কয়েকটি অধ্যায় অবলম্বনে) ।
গ) ‘জীবন চরিত’ – ১৮৪৯ খ্রিঃ (চেম্বার্সের ‘Biographies’অবলম্বনে)
ঘ) ‘বোধোদয়’ -১৮৫১ খ্রিঃ (চেম্বার্সের Rudiments of Knowledge অবলম্বনে)
ঙ) ‘শকুন্তলা’ -১৮৫৪ খ্রিঃ (কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ নাটকের স্বচ্ছন্দ গদ্যানুবাদ)
চ) ‘কথামালা’- ১৮৫৬ খ্রিঃ (ঈশপের ‘ফেবল্স অবলম্বনে)
ছ) ‘সীতার বনবাস’ – ১৮৬০ খ্রিঃ (ভবভূতির ‘উত্তরচরিত’ – এর প্রথম দুই অঙ্ক ও বাল্মীকি রামায়ণের উত্তর কাণ্ডের আখ্যান অনুসরণে) ।জ) ‘আখ্যান মঞ্জরি’- ১৮৬৩
ঝ) ‘ভ্রান্তিবিলাস’ – ১৮৬৯ খ্রিঃ (শেক্সপীয়রের ‘Comedy of Errors’ থেকে)

২. মৌলিক রচনা :

ক)”সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য শাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব”(১৮৫৩)- বাঙালির লেখা সংস্কৃত সাহিত্যের
প্রথম ইতিহাস।

খ) ”বিদ্যাসাগর চরিত” -১৮৯১ খ্রিঃ (অসম্পূর্ণ, এটি তাঁর স্বরচিত জীবনচরিত)

গ) ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ-‘ (বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বালিকা কন্যা প্রভাবতীর মৃত্যুতে রচিত বাংলা গদ্যে প্রথম শোককাব্য।)

৩. লঘু রচনা :-

ক) ‘অতি অল্প হইল’ – (১৮৭৩ খ্রিঃ) কস্যচিৎ উপযুক্তভাইপোস্য ছদ্মনামে।
খ) ‘আবার অতি অল্প হইল’ – (১৮৭৩ খ্রিঃ) কস্যচিৎ উপযুক্তভাইপোস্য ছদ্মনামে।
গ) ‘ব্রজবিলাস – (১৮৮৪ খ্রিঃ) কস্যচিৎ উপযুক্তভাইপোস্য ছদ্মনামে ।
ঘ) ‘রত্নপরীক্ষা’- (১৮৮৬ খ্রিঃ) কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোসহচরস্য ছদ্মনামে ।

৪.সামাজ সংস্কারমূলক রচনা :-

ক) ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ – (১ম ও ২য় খণ্ড) – ১৮৫৫ খ্রিঃ
খ) ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’ (১ম খণ্ড – ১৮৭১ খ্রিঃ, ২য়খণ্ড-১৮৭৩ খ্রিঃ)

৫.শিক্ষামূলক রচনা :-‘বর্ণপরিচয়’ (১ম ও ২য় ভাগ ১৮৫৫) ও ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’(১৮৫১)

Read More : কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর গদ্যশৈলির বৈশিষ্ট্য :-

ক) সাধু গদ্যভাষার মধ্যে ছন্দচেতনা এনেছেন এবং গদ্যে সুর, তাল, লয়, যতি ইত্যাদির প্রয়োগ কুশলতায় গদ্যের মধ্যে প্রবহমানতা এনেছে ।

খ) বঙ্কিমচন্দ্রের আগেই বিদ্যাসাগর বিষয়ের প্রয়োজন অনুসারে ভাষাকে জটিল ও সরল করেছিলেন।
বিরতি ও যতি চিহ্ন দ্বারা সংশোধিত করে বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যে বোধের ভাষাকে রসের পর্যায়ে উন্নীত করেন।

গ) গদ্যকে উপবাক্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করে, বাক্যকে ভাবানুসারে ছন্দস্রোত এনে, বাক্যের গতির মধ্যে পূর্ণতা এনেছেন বিদ্যাসাগর।

ঘ)সংযুক্ত ক্রিয়াপদের ব্যবহার তাঁর গদ্যে বিশেষভাবে চোখে পড়ে—যেমন, গমন করিলেন, শ্রবণ করিলেন ইত্যাদি।

ঙ) বাংলা গদ্যকে সংহত করার জন্য সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহার করলেও তিনি গদ্যকে প্রতিকূলতা থেকে মুক্ত করেছেন ও অনেক পরিমাণে সরল করে দিয়েছেন।
কমা ও সেমিকোলনের ব্যবহার বিদ্যাসাগরই প্রথম যথার্থভাবে করতে পেরেছিলেন। ইংরেজি বাক্যর গঠনরীতি (SVO) তার রচনায় চোখে পড়ে ।

Important SAQ question

1)ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম কত সালে ?

উঃ – ১৮২০ খ্রি.।

2) আধুনিক বাংলা গদ্যের প্রকৃত জনক কাকে বলা যায় ?

উঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ।

3) বিদ্যাসাগরের একটি অসমাপ্ত লেখার নাম লেখো।

উঃ বিদ্যাসাগর চরিত (১৮৯১)।

4)বিদ্যাসাগরের কোন রচনাটি মার্শম্যানের হিষ্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচিত ?

উঃ বাঙ্গালার ইতিহাস।

4) বিদ্যাসাগর রচিত শিশুপাঠ্য গ্রন্থের নাম ও তার প্রকাশকাল লেখো ।

উঃ ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫)।

5) শেক্সপিয়ারের কমেডি অফ এরর্স এর অবলম্বনে বিদ্যাসাগরের রচনা কোনটি ?

উঃ ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (১৮৬৯)।

6) বাংলা সাহিত্যে গদ্যে লেখা প্রথম শোক গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ প্রভাবতী সম্ভাষণ।

7) ঈশপের ফেবলস এর অনুকরণে বিদ্যাসাগর কোন গ্রন্থটি রচনা করেন ?

উঃ ‘কথামালা’ (১৮৫৬)

8) ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য’ ছদ্মনামে রচিত বিদ্যাসাগরের দুটি রচনার নাম লেখো।

উঃ ‘অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩), ‘ব্রজবিলাস’(১৮৮৪)।

9) বিদ্যাসাগরের একটি অনুবাদ গ্রন্থের নাম লেখ ।

উঃ ‘শকুন্তলা’ (১৮৫৪)

10) বিদ্যাসাগরের এমন একটি রচনার নাম লেখো যেটি প্রকাশিত হয় নি ?

উঃ ‘বাসুদেব চরিত’ , যা ভগবত অবলম্বনে রচিত হয়েছে।

11) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থের নাম কী ?

উ:- বেতাল পঞ্চবিংশতি।

12) ‘বিদ্যাসাগর-চরিত’- এর লেখক কে ?

উ:- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখাটি তোমাদের কতটা কাজে লাগলো তা আমাদের কমেন্টে অবশ্যই জানাও। এই ধরনের আর কোন কোন লেখা পেতে চাও তা আমাদের অবশ্যই জানাও। সমস্ত ক্লাসের নিয়মিত ভিডিও পেতে Prerona Academy YouTube চ্যানেলটিতে অবশ্যই যুক্ত থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Primary TET 2022 Mock Test

X