বিশেষণ পদ কাকে বলে ? || বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ
বিশেষণ পদ ও বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণ সহযোগে আলোচনা
সুমন খুব ভালো ছেলে।
এই বইটা ছেঁড়া।
ফুলটা সুন্দর।
বড় ছাতা।
এই বাক্যগুলিতে দেখো খুব, ভালো, ছেঁড়া, সুন্দর ,বড় পদগুলি দ্বারা পাশে থাকা অপর কোন পদের সম্পর্কে দোষ, গুণ,অবস্থা, পরিমাণ, এসব বোঝানো হচ্ছে। তাই এগুলি হল বিশেষণ পদ। অর্থাৎ বিশেষণ পদ হল- যে পদগুলি পাশে থাকা অপর কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ ইত্যাদি বোঝায়। অন্যভাবে বলা যায় যে পদ অপর কোন পদকে বিশেষিত করে তাকে বলে বিশেষণ পদ। যেমন- কালো কাক, মিঠে রোদ, বোকা ছেলে ইত্যাদি।
বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ :
বিশেষণ পদ প্রধানত তিন প্রকার। যেমন-
ক) নাম বিশেষণ।
খ) বিশেষণের বিশেষণ।
গ) ক্রিয়া বিশেষণ।
ক) নাম বিশেষণ :যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের গুণ, অবস্থা ,ধর্ম ,সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি প্রকাশ করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে।
উদাহরণ: চমৎকার ছেলে, ঠান্ডা বরফ , এক লক্ষ টাকা ,তৃতীয় কন্যা, দয়ালু ব্যক্তি, পবিত্র গ্রন্থ, পঞ্চ পান্ডব, নীলাভ আকাশ ইত্যাদি।
বিশেষ্য ও সর্বনাম পদকে নামপদ বলা হয়। এজন্য এর বিশেষণের নাম হল – নাম-বিশেষণ।
i) বিশেষ্যের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য পদের বৈশিষ্ট্য, ধর্ম, গুণাগুণ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা, ক্রম, মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে।
উদাহরণ :
১) অর্ঘ্য বুদ্ধিমান ছেলে।
২) অঙ্কিতা লাল জামা গায়ে দিয়েছে।
এই দুটি বাক্যে ‘বুদ্ধিমান’, ও ‘লাল‘ পদ দু’টি যথাক্রমে ‘ছেলে’, ‘জামা’ এই দুটি বিশেষ্যের পরিচয় স্পষ্ট করছে। তাই বুদ্ধিমান, লাল পদ বিশেষ্যের বিশেষণ।
যে বিশেষ্যপদগুলির গুণ প্রকাশ করছে ঠিক তাদের আগে এদের অবস্থান।
এছাড়াও- পোষা ময়ূর,সফেন সমুদ্র,অন্ধকার রাত, ভাঙা কুঁড়ে ঘর ইত্যাদি।
ii) সর্বনামের বিশেষণ :যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি জানান দেয়, তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে।
উদাহরণ :
তুমি অধম – তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?
ও মূর্খ কি প্রকারে বলিবে ?
উদাহরণদুটিতে অধম, উত্তম, মূর্খ বিশেষণগুলি যথাক্রমে তুমি,আমি,ও সর্বনাম পদের পরে বসেছে। তাই ‘অধম’, ‘উত্তম’, ‘মূর্খ‘ – সর্বনামের বিশেষণ।
অর্থ ও গঠন প্রকৃতি অনুসারে নাম বিশেষণকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় –
১) গুণবাচক বিশেষণ :যে বিশেষণ পদের দ্বারা অন্য পদের দোষ, গুণ, ধর্ম প্রকাশ পায়, তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে।
গুণবাচক বিশেষণের উদাহরণ:-
পবিত্র মন্দির,ভালো ছেলে, মন্দ মেয়ে, সুন্দর দৃশ্য, লম্বা গাছ, বেঁটে লোক, উঁচু প্রাসাদ, মধুর ভাষণ, বড়ো নদী, ছোটো ছেলে ইত্যাদি।
২) অবস্থাবাচক বিশেষণ :যে বিশেষণ অন্য পদের অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে।
অবস্থাবাচক বিশেষণের উদাহরণ :-
গরিব কর্মচারী, জ্বলন্ত সূর্য, সুস্থ পরিবেশ, কঠিন পদার্থ, দরিদ্র ব্যক্তি, ধনী মহাজন, সুখী মানুষ , চলন্ত ট্রেন, ফুটন্ত জল ইত্যাদি।
৩) সংখ্যাবাচক বিশেষণ :যে বিশেষণ পদ বিশেষ্যের সংখ্যা নির্দেশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে।
সংখ্যাবাচক বিশেষণের উদাহরণ :-
এক দিন,পাঁচ মাস, দশ বছর, পাঁচটি কলম, দুটো ছেলে,লাখ টাকা,কোটি বৃক্ষ ইত্যাদি।
৪) পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ : যে বিশেষণ পদের দ্বারা কোনো বিশেষ্যের সংখ্যাগত ক্রমিক অবস্থান বোঝানো হয়, তাকে পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ বলে।
পূরণবাচক বিশেষণের উদাহরণ:-
প্রথম বালক, দ্বিতীয় অধ্যায়, নবমী নিশি , দশের নামতা, পয়লা বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ,তিনের ঘণ্টা,তেরোর পাতা ইত্যাদি।
মনে রেখো : পূরণবাচক বিশেষণ সবসময় একটি বিশেষ্যকে বোঝায়। অর্থাৎ ‘দ্বিতীয় অধ্যায়’ বললে একটিই অধ্যায় বোঝায়।
৫) পরিমাণবাচক বিশেষণ :যে বিশেষণ কোনো বিশেষ্যের পরিমাণ বোঝায়, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে।
পরিমাণবাচক বিশেষণের উদাহরণ :-
এক লিটার তেল, দু’কেজি মাছ, দুই বিঘা জমি, একমুঠো চাল, ইত্যাদি।
৬) সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ :সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের পরে তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে গঠিত বিশেষণকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ বলে ।
উদাহরণ :-
মোগলাই পরোটা, কলকাতাই ফ্যাশন, ভারতীয় সংস্কৃতি, রাবীন্দ্রিক কাব্য, কাশ্মীরি শাল, জাপানি জাহাজ ইত্যাদি।
৭) উপাদানবাচক বিশেষণ :বিশেষ্যের উপাদানটি বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে উপাদানবাচক বিশেষণ বলে ।
যেমন-
সুতি বস্ত্র ,কাগজি নোট ,পাথুরে কয়লা, কাঁকুরে মাটি, বেলে পাথর ,কাগুজে নৌকা , ইত্যাদি।
৮) সর্বনামীয় বিশেষণ :সর্বনাম পদ বিশেষণ হয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে।
যেমন-
যত মত তত পথ, মদীয় গৃহে, তদীয় আলয়ে, সেই সূর্য ,এই চাঁদ, ওই আকাশ, যত লোক ইত্যাদি।
খ) বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণগুলি অন্য একটি বিশেষণের গুণ,অবস্থা,প্রকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে।
যেমন-
ধবধবে সাদা জামা, কুচকুচে কালো কুকুরছানা, টকটকে লাল ফুল,খুব জোরালো বাতাস,বেশ কনকনে ঠাণ্ডা ইত্যাদি।
গ) ক্রিয়াবিশেষণ : যে সব বিশেষণ পদ ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাদের ক্রিয়া-বিশেষণ বা ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।
ক্রিয়া কী ভাবে ঘটছে, তা বুঝিয়ে দেওয়া ক্রিয়াবিশেষণের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়া সংঘটনের স্থান-কালও ক্রিয়াবিশেষণ রূপে কাজ করে।
যেমন-
লেখাটা তাড়াতাড়ি সেরে নাও।
গাড়িটি জোরে ছুটছে।
লোকটি হেঁটে হেঁটে আসছে।
কাজটি সহজে করা যাবে না।
উদাহরণগুলিতে ‘তাড়াতাড়ি’, ‘জোরে’, ‘হেঁটে হেঁটে’, ‘সহজে’, পদগুলি ক্রিয়াবিশেষণ।
বিশেষণের প্রয়োগ বৈচিত্র্য:-
বিশেষণ পদের গঠন বা উপাদান অনুসারে বিশেষণের বিভিন্ন প্রকার প্রয়োগ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় –
ক) একপদী বিশেষণ:- একটি মাত্র পদের সাহায্যে গঠিত বিশেষণ পদকে একপদী বিশেষণপদ বলে। যেমন-
ঠান্ডা জল
নিঝুম রাত্রি
মেঘলা আকাশ।
খ) বহুপদী বিশেষণ:- বাক্যের মধ্যে একাধিক পদের সমবায়ের যে বিশেষণ পদ গঠিত হয় তাকে বহুপদী বিশেষণ পদ বলা হয়। যেমন-
নানা-রঙের দিনগুলি।
পিছনে-ফেলে-আসা দিন।
প্রাণ-কেড়ে-নেওয়া হাসি।
গ) বাক্যাশ্রয়ী বিশেষণ:- যখন একটি বাক্যাংশ বা বাক্য খন্ডের দ্বারা সেই বাক্যের মধ্যে অবস্থিত কোন পদকে বিশেষিত করা হয়, তখন সেই বাক্যাংশকে বাক্যাশ্রয়ী বিশেষণ বলা হয়ে থাকে। যেমন-
যেমন- অনেক দেখেশুনে কাজ শিখেছে, এমন কর্মচারীর জন্য নবীনবাবু হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঘ) শব্দদ্বৈতাশ্রয়ী বিশেষণ – একই শব্দ পর পর দুবার ব্যবহৃত হয়ে যে বিশেষণ হয় ,তাকে শব্দদ্বৈতাশ্রয়ী বিশেষণ পদ বলে ।
যেমন- টানটান উত্তেজনা । ঝুড়ি ঝুড়ি আম । হাজার হাজার টাকা।
ঙ) ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ:- প্রত্যয় যুক্ত ধ্বন্যাত্মক শব্দ যখন বাক্যের মধ্যে অবস্থিত কোন পদকে বিশেষিত করে, তখন তাকে ধ্বন্যাত্মক বিশেষণপদ বলা হয়। যেমন:-
কনকনে ঠান্ডা
টুকটুকে লাল
ঝলমলে রোদ
চ) পদান্তরিত বিশেষণ – বিশেষ্য পদ পদান্তরিত হয়ে বিশেষ্যের দোষ, গুন,অবস্থা প্রকাশ করলে তাকে পদান্তরিত বিশেষণপদ বলে ।
যেমন- বন্য প্রাণী সংরক্ষণ , পড়ন্ত বেলা , শারদীয় উৎসব ।